মানুষকে নিয়ে গল্প জুড়তে আমার জুড়ি নেই। মানে একেবারে যাকে বলে, বলা মাত্রই লিখে ফেলবো কিছু একটা।
সাহিত্য অবশ্যি হবেনা কিন্তু গল্প হয় বৈকি।
বিশেষ করে মানুষের প্রেম, জীবন, দর্শন নিয়ে আমার লিখতে বেশ লাগে।
আমি দারুণ এক শ্রোতা। এত চমৎকার একটা আবহ দিয়ে যে দুদিনের পরিচয়ের মানুষও আমার কাছে তাদের গল্পের ঝুলি খুলে বসে যেটা হয়তো তাদের খুব আপন মানুষটিও জানেনা।
যদিও পরবর্তীতে তাদেরকে সান্ত্বনা স্বরূপ বলা আমার নিখাঁদ সৎ মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, তবুও কেউ আমার কাছে এলে, কখনো "না" বলতে পারিনা। কথা বলতে না পেরে হাঁসফাঁস করা মানুষগুলোর জন্য আমার ভীষণ মায়া হয়।
খুব কাছ থেকে মানুষের গল্প শুনলে বুঝা যায়, আমরা কত ক্ষুদ্র দর্শনকে জীবন ধরে নিয়ে দিনানিপাত করছি।
যখন উচ্চমাধ্যমিকে পড়তাম হঠাৎ একবার খুব কবিতা লেখবার ঝুম ওঠে।
আদপে কবিতাতো নয়, ওটাকে কোবতে বলাই শ্রেয়!
ক্লাসে আমার কোনো নির্দিষ্ট সখা-সখী'র দল ছিলোনা অমনা।
আমি ছিলাম সবার সাথী ধরণের। কেউ আমার জন্য বেঞ্চে জায়গা রাখবে, অন্যকে বসতে দেবেনা, আমার জন্য টিফিনের সময় অপেক্ষা করবে অমন বন্ধু বান্ধব আমার ছিলোনা।
এতে বরং আমি বেশ আরামেই থাকতাম।
সবার মাঝে আমার অবাধ যাতায়াত থাকতো।
কেউ আমাকে ফিরিয়ে দিতোনা প্রতিপক্ষ দলের বলে, কারো সাথে আমার এডজাস্ট করতে হতোনা মতের অমিল হলে।
এবং যখন এই ব্যাপারটা অবচেতন থেকে সচেতনভাবে উপলব্ধি করলাম, আমি বেশ আমোদ পেলাম।
তো যাহোক, যা বলছিলাম।
একবার খুব ঝুম উঠলো, কোবতে রচনার। এক দুই করে পুরো ক্লাসে ছড়িয়ে পড়লো এই খবর।
পরে রীতিমত সেখানে লাইন পড়ে গেলো।
যতজনের "আমার উপর অধিকার" আছে ধারণা হলো, সকলেই কবিতার ফরমায়েশী নিয়ে এলো, কবিতা লিখতে হবে।
তাদের আদল-বাদল, বিশিষ্ট বৈশিষ্ট এসবকে মিশিয়ে সমন্বয় করে ৮/১০ লাইনের করে ছড়া লিখে দিচ্ছিলাম। বলাবাহুল্য, সেইসব শ্রাদ্ধের ছড়া পেয়ে তারা মাত্রাতিরিক্ত খুশি।
আমি যে শেষমেশ ক্রিয়েটিভিটি হারিয়ে, কারো কোদাল কোদাল দাঁত বা কারো গরুর মতন চোখের উপমা অনেক দুশ্চিন্তা নিয়ে ব্যবহার করেছি পাছে তাতে তাদের অপমানবোধ হয়, অথচ তা নিয়ে কারো মাথা ব্যথায় দেখা গেলনা।
পরে মনে হলো আচ্ছা এমন কেন!
এখন যখন পরিপক্ক বয়সে এসে সেটা ভেবে দেখছি, আমারও "আশাপূরর্না দেবী"র মতন মনে হচ্ছে, যে তাদেরকে নিয়ে যে গল্প বা কবিতা হতে পারে এই বোধটাই বোধ করি সব থেকে বড় আশ্চর্র্যের ছিল!
এই সুবিশাল মানুষের ভিড়ে একেক ক্ষেত্রে একেক প্রতিযোগিতার দৌড়ে কোনো স্থান অধিকার না করা মানুষগুলো বোধহয় এভাবেই তাদের ভাবে।
অমূল্য, অগণ্য, অবরুদ্ধ, অনৈক্য বৈ আর কিছু নয় তারা।
আর সম্ভবত এজন্যই তাদের ভেবে একান্তই তাদেরকে নিয়ে যখন কেউ যাচ্ছেতাই ছন্দ গেঁথে কবিতার বদনাম করে যাচ্ছে, তাতে তাদের কোনো বিকার ছিলোনা।
সম্ভবত তখন থেকেই আমার মানুষদের নিয়ে গল্প লিখার ইচ্ছেটা হয়। এবং দীর্ঘ দিনের পড়ার অভ্যেস থাকায় সেখানে হাত পাকানো সুবিধে হয়।
ইচ্ছে করে সবাইকে নিয়ে গল্প লিখি, বিশেষ করে সেইসব মানুষদের, যারা বেঁচে থেকেও অদৃশ্যের মোট দিন যাপন করছে। প্রতিযোগিতা, দ্বন্দ, কর্ম, যজ্ঞের আড়ালে যাদের জীবন যাপন করা হারিয়ে গেছে।
আমার ওদের বলতে ইচ্ছে করে, তোমাদের এখনো অধিকার আছে সৌন্দযের্র প্রতি, আমোদ প্রিয় হবার, যত্ন পাবার, সর্বোপরি জীবনের প্রতি।
তুমি চল্লিশ পেরিয়ে যাওয়া রমণী হলেও, এখনো নতুন লাল রঙের প্রতি তোমার অধিকার আছে।
তোমার চামড়ায় রান্নাঘরের চিরস্থায়ী ছাপ বসে গেলেও, তোমার একটু সুন্দর হতে চাইবার অধিকার আছে।
তোমার হাঁটুর জোর কমে এলেও, আছে চার দেয়ালের বাইরে যেয়ে দম নিতে চাইবার আহ্লাদে অধিকার।
আছে স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানের পারিপারিক বন্ধন থেকে মাঝে মাঝে স্বার্থপরের মোট বিরতি নেবার অধিকার।
বিশ্বাস করো, সত্যিই আছে।
থাকবে, যতদিন তুমি নিঃশ্বাস নেবে।
কেউ এসে দিয়ে যাবেনা, একান্ত করে আদায় করে নিও
- Get link
- X
- Other Apps
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment