Skip to main content

আমার ১৪'ই ফেব্রুয়ারী আর...

 

আমার ১৪'ই ফেব্রুয়ারী আর...

5 MIN READ922 WORDS

১৯৮৩ এর ১৪ ফেব্রুয়ারি।
ঢাকা থমথমে।
সচিবালয়ের দিকে ঘেরাও সকাল ১০ টায়।
মিছিল চলল সোজা কার্জন হল হয়ে হাইকোর্ট মোড় দিয়ে সচিবালয় এর দিকে।
স্বভাবতই বাধা আসলো শিক্ষাভবন হাইকোর্ট মোড়ে।
আরেক গৌরব ইতিহাসের শুরু এইখানেই...

photo_2023-02-14_10-26-08.jpg

আপনারা যারা ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা রাঙ্গাতে টিএসসি, শাহাবাগ, কার্জন হল, পলাশী বা নীলক্ষেত গেলেন এবং ভবিষ্যৎএও যাবেন তাদের বলি, আপনারা যারা ঐ হাইকোর্টের মোড়ে যাবেন... দেখবেন সে ফলকটা যার গায়ে লেখা আছ

"শিক্ষা অধিকার চত্ত্বর"

তাতে কি ?
আপনারা আজ শিক্ষিত হয়ে, মাথা উঁচু করে যে এইদিন প্রেমিক/প্রেমিকার হাতধরে সার্বভৌমত্বের সাথে হাঁটবেন, যাঁদের কল্যাণে,
তাঁদের এমনকি নামতো দূরে থাক... তাঁদের ত্যাগটাও কি জানেন?

২১শে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা রক্ষা করেই কিন্তু সব অর্জন হয়নি।
সেই ভাষার সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে আবারও রাজপথ রঞ্জিত করতে হয়েছে, কোনো ভীনদেশীদের কাছে নয়, আমাদেরই বেছে নেয়া দেশ নেতাদের কাছে।

শুধুমাত্র আপনার, আমার মত পরের প্রজন্মের শিক্ষা নিশ্চিত করতে তাঁদের রক্তে কিন্তু রঞ্জিত হয়ে আছে ওই এলাকাগুলার রাজপথ।

আমরা কতজন জানি যে ৫২’র মতোই ৮৩'তেও বুকের রক্ত দিয়ে শিক্ষাকে বানিজ্যিকীকরণহওয়া প্রতিরোধ করেছিলো এ দেশের ছাত্র সমাজ???

এখন বলুন শিক্ষার বানিজ্যিকীকরণ আবার কি?

অনেকটা স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার জন্য আরেক লড়াই!
আমার, আপনার মেধার মূল্যায়ন পাওয়া নিশ্চিত করে গেছে সেইসব আহত আর নিহত হওয়া ছাত্র সমাজ।

১৯৫২’র ২১শে ফেব্রুয়ারির কথা জানিতো?
১৯৬২’র ১৭ই সেপ্টেম্বরের কথা
কিংবা ১৯৮৩'র ১৪ই ফেব্রুয়ারির গল্পটা???
এটা অনেকটাই জাতীয় দিবস ছিলো যতক্ষণ না তৎকালীন বহুল পঠিত একটি মিডিয়ার কাঁধে সওয়ার হয়ে আসে " বিশ্ব ভালোবাসা দিবস"এর রঙিন চশমা দেশের মানুষের চোখে পরিয়ে দেয়া হয়।

আসুন বলি সে গল্প।

১৯৬২’র পরে তার ঠিক ২১ বছর পরের কথা।

স্বাধীন বাংলাদেশে তখন কুদরত -ই- খোদা শিক্ষানীতির বিপরীতে এরশাদ শিকদারের নির্দেশে আবির্ভূত হল “মজিদ খান শিক্ষানীতি”।
যেটার যার মূলনীতি হলো,
“বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব ও শিক্ষার ব্যয়ভার যারা ৫০% বহন করতে পারবে, তাদের রেজাল্ট খারাপ হলেও উচ্চ শিক্ষারর সুযোগ দেওয়া হবে”

মোদ্দাকথা, আপনার টাকা নাই, সুতরাং আপনার শিক্ষা পাওয়ারও অধিকার নাই”

যেখনে তখনকার (এমনকি এখনো) আশিভাগেরও বেশী মানুষ যেখানে দাদিরদ্যসীমার নীচে বাস করে। তখন এই নীতি ছাত্রসমাজের কাছে কেমনভাবে আবির্ভূত হয়েছিলো কল্পনা করতে পারছেন!?

সাথে সাথেই ৫২’র সত্ত্বা যেনো আবার জেগে উঠলো ছাত্রসমাজের মাঝে।
এই নীতির বিপক্ষে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল সহ যাবতীয় ছাত্র সংগঠন এক হয় ১৯৮২’র ১৭ সেপ্টেম্বর, যা ছিল ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলনের ২০ বছর পূর্তি দিবস।
২১ তারিখেই গঠিত হয় সর্বদলীয়ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ!
১৯৮৩’র জানুয়ারিতে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতিকে গ্রেফতার করা হলে আন্দোলন আরো বেগ পায়।
আর তারই ধারাবাহিকতায় ১৪ই ফেব্রুয়ারি সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচী দেওয়া হয়।
.
১৯৮৩ এর ১৪ ফেব্রুয়ারি।
ঢাকা থমথমে।
সচিবালয়ের দিকে ঘেরাও সকাল ১০ টায়।
মিছিল চলল সোজা কার্জন হল হয়ে হাইকোর্ট মোড় দিয়ে সচিবালয় এর দিকে।
স্বভাবতই বাধা আসলো শিক্ষাভবন হাইকোর্ট মোড়ে।
আরেক গৌরব ইতিহাসের শুরু এইখানেই...
মিছিলের অগ্রভাগে ছিল মেয়েরা।
কাটাতারের বেড়া দিয়ে রাখায় ওইখানেই বসে চলল প্রতিবাদ।
শান্তিপূর্ণভাবে।
তবুও বিনা উস্কানীতেই মিছিলে চলল টীয়ার গ্যাস, গরম পানি বর্ষণ ছাড়াও চললো গুলি বৃষ্টি।

photo_2023-02-14_10-26-04.jpg

তখন এক রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বিটিভি ছাড়া মিডিয়া বলতে জোরালো কিছুই ছিলো না। কোন স্বৈরশাসক প্রকাশ করবে সে নিজে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ মেরে ফেলেছে?
এতে নিহত হয় জয়নাল, দিপালীসহ দশজন, আহত হয় শতাধিক। শিশু একাডেমির অনুষ্ঠানে যোগদান করতে গিয়ে নিহত হয় শিশু দীপালী, তার লাশ গুম করে ফেলে পুলিশ।
জয়নালের গুলিবিদ্ধ দেহকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পশুরা।
পুলিশ সেদিন হত্যা করেই শান্ত হয়নি, বিকেলে ক্যাম্পাসে একটি যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করে সেনাবাহিনী। তার সঙ্গে যোগ দেয় তৎকালীন বিডিআর- পুলিশ।
শাহবাগ, টিএসসি চত্বর, কলাভবনের সামনে, নীলক্ষেত, কাঁটাবনের রাস্তা ধরে পুরো অঞ্চল ঘেরাও করে ফেলে তারা।
photo_2023-02-14_10-25-58.jpg

অপরাজেয় বাংলার সমাবেশে পুলিশ লাঠির্চাজ করে।
এসময় শত শত ছাত্রকে গেপ্তার করা হয়।
যারা আহত, তাদের নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন হলে। পুলিশ সেনাবাহিনী বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) হলে গিয়ে যার শার্টেই রক্ত দেখেছে তুলে দিয়েছে আর্মির হাতে।
.
আর্মির নির্যাতন শেষে ফিরে আসে অনেকে।
অনেককে সেদিনের পরে খুজে পাওয়া যায় নি।
১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে খ ম জাহাঙ্গীর, প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম নোমান, আশরাফুল হক মুকুল, লেলিন আজাদ, জালাল আহমেদ সহ আরো অনেকে গ্রপ্তার হন।
সেদিন বুকের তাজা রক্ত ঢেলে ছাত্র জনতা শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল।

তারপর থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ১৪ই_ফেব্রুয়ারী ছিল স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র প্রতিরোধী দিবস

তারপর শুরু হল পাপ পরিষ্কারকরণ।
তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালে সাংবাদিক শফিক রেহমানের হাত ধরে আসে “ভ্যালেন্টাইনs ডে” বা “বিশ্ব-ভালবাসা-দিবস”
.
১৪ ফেব্রুয়ারি।
বিভিন্ন দেশে এই দিনটি পালন করা হয় ভ্যালেন্টাইন'স ডে হিসেবে। আর বাংলাদেশে এর কৌতুকপূর্ণ নাম হয়েছে "বিশ্ব-ভালোবাসা-দিবস" হিসাবে।
১৪ই-ফেব্রুয়ারি এক বিশেষ দিন আমাদের জীবনে।
এইদিন রক্তাক্ত হয়ে আছে আমাদের ইতিহাস।
আমরাই যদি এটাকে ভুলে যেতে চাই, মনে রাখবে তাহলে কারা?

photo_2023-02-14_10-26-11.jpg

৯০ পরবর্তী প্রজন্মকে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত দিকে নেওয়া হয়েছে।
এইভাবেই চাপা পড়ে যায়, যাচ্ছে আমাদের ইতিহাস।
নিজেদের সংস্কৃতিকে ভুলতে ভুলতে, নিজেদের জন্ম পরিচয়, সোনালি ইতিহাস, পূর্বপুরুষদের আত্মত্যাগ সবকিছুই পিছনে ফেলে আসছি আস্তে আস্তে।
আমাদের ইতিহাস অজ্ঞতা কোনদিন আমাদের ক্ষমা করবে না।
সেদিন শুনলাম পাকিস্তানের বর্তমান_প্রজন্ম নাকি জানেই না “একাত্তরের” ইতিহাস।
ওদেরই বা দোষ কি! আমরাই আমাদের সম্পর্কেই বা আমরা কতটুকু জানি? কতটুকু মানি? কতটুকু ধারণ করি?

দেখা যাবে একদিন আইডেন্টেটি ক্রাইসিসে ভুগতে ভুগতেই আমরা মিলিয়ে যাবো। স্ট্রাকচারাল উন্নয়ন, উন্নত জিডিপি, পশ্চিমা ফ্যাশন আর নানাভাবে ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমরা ভুলে যাচ্ছি আমাদের শেকড়কে।
আর শেকড় আলগা হয়ে গেলে কিন্তু, মুখ থুবড়ে পড়তে সময় লাগবেনা।
.
এরশাদের আমলে ১৭ ফেব্রুয়ারি মজিদ খান নীতি বাতিল না করলে আজ পড়াশোনা করতে পারতেন না।
দীর্ঘ দু’দশকের নিরন্তর প্রচার ও চর্চায় শাসক শ্রেণী বেশ সফলভাবেই আমাদের " শিক্ষা স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের" নাম ভুলিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।
.
তবে আমরা আমোদ প্রিয় জাতি। দেশ-চেতনা সব “এক মিনিটের” নীরবতা অব্দিই। “ভালবাসা দিবসের” পরিবর্তে যদি জাতিকে “শোক দিবস” পালন করতে বলা হয় তাহলে হয়তো গৃহযুদ্ধ বেধে যাবার জোর একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যাবে।
“ভালবাসা দিবসে” না হয় প্রিয়ো/প্রিয়া’র হাতে একটি ফুল কম দিয়ে সেইটা না হয় “শিক্ষা অধিকার চত্ত্বরে” দিয়ে তাদেরকেও একটু ভালবাসা আসবেন!
পারলে ফেরার পথে কাঞ্চন, ছোট্ট দিপালী, জয়নাল ও আরো অনেকদের বলে আসবেন,

“আপনারা ভুল সময়ে জন্মাননি, ভুল কাজে আপনারা রক্ত দেননি”।

Comments

Popular posts from this blog

Music of Memories

  There are many songs, musical bands, and singers, which are related to certain memories and every time I listen or remember them, they remind me of those memories and times regardless of how old they are, they are still as vivid. Like, now after a long time, when I was listening to Linkin Park, it reminded me of the tender, precarious memories of my college days (11th&12th grade), plausibly the best memories of my academic life overall. Every song of Linkin Park reminds me of someone or something of those fragmented foregone days. When I was at the age of starting to learn about music appreciation, the world of music was rather very very concise and territorial in my country. I am referring to the time when broadband internet services were not available in our country yet and people would do a good business in just selling DVD, cassettes to music enthusiasts. Certainly, living in the suburbs of the city, in a culture where music is not much of a concern for daily life and not...

চৈত্রে সংক্রান্তি!

শর্টকার্ট বাজার আর চালু রান্নার চিন্তা নিয়ে বাজারে গেলেও, নজরকাড়া সবুজের কচি পুঁইশাকের টসটসে আঁটিটা দেখে পা যেন ওখানেই আটকে গেলো। প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ার মতো। নতুন বাসায় আসার পর, কাঁচা বাজারে এখনো পা রাখা হয়নি। অবশেষে সারাদিন ঘুমিয়ে পেটে যখন ছুঁচোর কের্তন শুরু হলো, উঠে চোখেমুখে পানি দিয়ে, ঝিমাতে ঝিমাতে মানিব্যাগ হাতে নিয়ে গেঞ্জিটা গায়ে চাপিয়ে নীচে নামলাম। মাসের শুরু হলেও, মানিব্যাগের অবস্থা শোচনীয়। ভাবতে লাগলাম কি কেনা যায়, যাতে করে এই মাসে ৩/৪ বার রান্না করা যাবে এই এক বাজারেই। ভাবলাম মুরগী/গরুর মাংস নিয়ে নিব, ল্যাঠা চুকে যাবে। কিন্তু খুব সব্জিটব্জি খেতে ইচ্ছে করলো, সারা সপ্তাহ বিফ/চিকেন খেয়ে মুখে অরুচি চলে আসছে রিতীমতো। সারা মাসে ৩/৪ বার রহস্য হচ্ছে প্রতি সপ্তাহে আমি একদিন রাঁধি, দুইদিন খাই। আর সাধারণত দিনে একবেলা খাই। এখন এই একবেলা খাই শুনে আপনার কল্পিত "ডায়েট"এর ধারণাকে প্রশ্রয় দেবেননা। এটা আসলে রান্নার আলসেমির কারণে। সপ্তাহের ৫ দিন আপিসে লাঞ্চ দেয়, সাথে দেয় টুকটাক নাস্তা, আর যত মন চায় তত চা/কফি। রুটিন এমন হয়েছে যে, খাই কেবল যতক্ষন কাজের মাঝে থাকি। বাসায় ফিরে ঘুম, ঘুম থেক...

Prologue: Conspiracy in Raven Hall

In one quite, peaceful evening, The Grand Marshal  was rejoicing her time in her study hall.  The door of the study hall was slightly open; open enough to have a sneaky glimpse into the inside of the hall. . General Tseraf of Serijah was passing by. He paused one moment by the door and peeked through the entrance. With the shimmering light of the glowing lanterns, he can discern that even though the Grand Marshal is staring at the parchment in her hands, isn't really reading anything at all. Tseraf chuckled thinking,  "heeeh! Even though she is adroit and expressionless when overseeing one the most dangerous part of the Kingdom, I assume occasionally she can be relaxed enough to let her guard down, hmm!" And within those couple of seconds, suddenly he felt that something is off... in her expression.  Something... alarming!  "What is it that I missing!  Regret? Agony? Anger? "  General Tseraf frowned  pondering for a moment . . General Tseraf made...