ঃ “আপনি পাথর! বাব্বাহ! কিভাবে পারেন এমন ঠান্ডা, শক্ত পাষাণ হৃদয় নিয়ে চলতে!”
ঃ (আমি হাসি!) আচ্ছা! তাই নাকি!
ঃ এক বিন্দু মিথ্যে না! আর যখন আপনি ঠাণ্ডা স্বরে ডাকেন “সোহানা” আমার কলিজা উড়ে যাইতো জানেন! এত ভয় আমি নিরেন্দ্র স্যারকেও পাইনি স্কুলে!
ঃ এই আমার মত এমন মিষ্টি হাসি কজনের দেখেছেন? কারো সাথে কখনো এই হাসি ছাড়া কথা বলেছি! (আমি আবার হাসি। আরেকটু জোরেই!)
ঃ উঁউহ! ওই হাসির যে ধার, সে আমাদের থেকে ভালো আর কে জানে! আপনি জানেন, রেড জোনে ঢুকবেন শুনলেই, সব থেকে এক্সপার্ট যে সেও এমন স্টুপিডের মত ভুল করে যে সে নিজেই বেকুব হয়ে যায়!
আমি ডকুমেন্টে চোখবুলানো রেখে ওর দিকে তাকাই-
ঃ বলেন কী!
মাঝেমধ্যে কাজের চাপে ৫টার পরিবর্তে ৭/৮টা অব্দি থেকে যাই অফিসে। সোহানার বিকাল ডিউটি থাকলে রেড-জোনের কাজ শেষ করে, টিমকে সব বুঝিয়ে দিয়ে ও আসে কুটুর কুটুর করে একটু গল্প করার আশায়। এরপর কফিতে চুমুক দিয়ে বলে-
ঃ কিন্তু আমিতো জানি আপনার মনডা কত নরম! কত মায়া তার ভিত্রে। আপনারে যে কষ্ট দেয় হেয় যদি জানতো কিসে যে আঘাতডা করলো!
ঃ (আমি কাজ রেখে কৌতুহলী চোখে জিজ্ঞেস করি) জানলে কি হতো!
ঃ এইযে, আমার মত নগদে আপনার প্রেমে পইরা যাইত!
সোহানা হলো মোমের মত। উষ্ণতা পেলেই গলে গলে পড়ে। এখন ওর বাচনভঙ্গির পরিবর্তনে বুঝা যাচ্ছে এ মুহুর্তে সে বড়ই উষ্ণতা অনুভব করছে। খাঁটি ময়মনসিংহের টান চলে এসেছে।
অথচ এই সোহানা মাস খানেক আগেও আমাকে জমের মত ভয় পেতো। তাকে ডেকে পাঠালেও আসতে চাইতোনা।
আর সে অঘটনের পর, এখন কাজের ফাঁকে ফুরসৎ মিললেই সুডুত করে চলে আসে। ময়মনসিংগা টানে কুটুর কুটুর করে গল্প করে।
আমার মানুষের কাছে আবেগ প্রকাশ না করার এক অদ্ভুত প্রতিবন্ধকতা আছে। আমি যেমন খুব অল্পেই তুষ্ট হই, খুব অল্পে কষ্টও পাই।
আমি যতটা না ছুরিকাঘাতের আঘাতে কষ্ট পাই, তার’চে বেশী আমাকে আহত করে অনাহূত উপেক্ষা।
এজন্য আমি মানুষের নিবিড় সঙ্গ সচেতনভাবে এড়িয়ে চলেছি আজীবন। একটা তুচ্ছ উপেক্ষা আমার একটা গোটা দিন ধ্বংস করে দিতে পারে।
আমাকে সেসব অবহেলা, অশিষ্টাচার, উপক্ষা মনের চেয়ে চোখে আঘাত বেশী করে। এই অনুভূতি আমার বড়ই অপ্রিয়।
এজন্য আমার অনেক হিতৈষী থাকলেও পারতপক্ষে শামুকের মত গুটিয়ে থাকতে চাই। আমি মানুষ বড় ভয় পাই। নিরাপদ দূরত্বে থাকি এবং রাখি।
কিছু ক্ষেত্রে হয়তো আমার সে নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। অজান্তেই কাছে চলে যাই বা আসতে দেই। তারপর একসময় কোনো এক অঘটন থেকে ঠাহর হয়, গুনাহ করলাম নিজের প্রতি।
শাস্তি পাই, প্রায়শ্চিত্ত করি এবং তওবা করি।
কিন্তু তাই বলে, তাতে আমার কারো প্রতি অনুযোগ নেই, অভিযোগ নেই, রাগতো নাই-ই।
অভিমান জমে জমে পাহাড় হয়ে যায়। সে পাহাড়ের পিছনে বর্ষায় ভরা নদীর যে ফেনিল ঢেউ, তার খবর কেউ পায়না।
কাউকে পেতে দেই না। কেউ পেলে তাকে আমার ভারী অপছন্দ হয়ে যায়।
এ যেমন সোহানা আমার পরম অপছন্দের একটি ব্যক্তি। কারণ একদিন দুর্ঘটনাক্রমে ও সে কঠিন পাহড়ের পেছনে নিঃশব্দে বয়ে চলা এক প্রশান্ত নদীর খোঁজ পায়।
যার কাছে স্বামী, সন্তান থাকার পরও যার মন আমার জন্য আকুলিবিকুলি করে, সে আমার অপ্রেমিক। আমার জীবনে অনেক মানুষের দরকার নেই।
এমন ক’জন অপ্রেমিক থাকলেই জীবন চলে যায়।
Comments
Post a Comment