সঞ্জয় দা বলতো "এই ম্যাটেরিয়ালস্টিক জীবন আর কত! একটু থাম এবার। থেমে নিযের দিকে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখ। এই যে তোর ইন্দ্রিয় এরা তোকে ছাড়া পৃথিবীর সবাইকে সবকিছু দেয়৷ কেবল তোকে ছাড়া। এই কান তোকে ছাড়া সব্বার কথা শোনে, এই চোখ তোকে ছাড়া যাবতীয় সবকিছু দেখে, দেখতে চায়। এবার এদের থামা।"
কথাগুলো শুনে আসলেই ভাবনায় পড়লাম! আসলেইতো। এভাবে কেউ কখনো আগে বলেনি!
আমার মত আগ্রহী শিষ্য পেয়ে সঞ্জয় দা ঝুলিটাকে আরেকটু খোলার সিদ্ধান্ত নিলেন।
কথাগুলো শুনে আসলেই ভাবনায় পড়লাম! আসলেইতো। এভাবে কেউ কখনো আগে বলেনি!
আমার মত আগ্রহী শিষ্য পেয়ে সঞ্জয় দা ঝুলিটাকে আরেকটু খোলার সিদ্ধান্ত নিলেন।
অনুমান করলাম সঞ্জয় দা রামকৃষ্ণ, সারাদা দেবীদের ভক্ত। তিনিও এখন অতিন্দ্রীয়ের খোঁজে নেমেছেন নিজস্ব ইন্দ্রিয়দের তদুপরি বর্জন ও উপেক্ষার মাধ্যমে।
এবং সে আলোর পথের সন্ধান আমাকেও দেবার চেষ্টা করছেন।
আর আমি সনাতনদা'র সাজিয়ে আনা প্লেট ভর্তি নানান মুখ রোচক খাবার খেয়ে যাচ্ছি টপাটপ আর হাঁ হু করে মাথা নাড়ছি।
হাত চাটতে চাটতে দীর্ঘ আলাপচারিতার পর আমি বেখেয়ালে মুখ ফসকে আবারও বলে বসলাম " সঞ্জয় দা, একটু খাবার খাও!"
সঞ্জয় দা আমার দিকে হতাশ চোখে চেয়ে রইলেন আর মাথা নাড়লেন! "হায় ঈশ্বর! সাতখন্ড রামায়ণ কাকে পড়ালাম এতক্ষণ। নাহ! এই কিসসু হবে না তোর দ্বারা!"
আমি ফিক করে হেসে ফেললাম।
আজ হঠাৎ মনে হলো সঞ্জয়দাকে বলি- "এই যে দ্যাখো। আমাকেতো হোপলেস বলেছিলে, অথচ এখন আমি বহুদিন ধরেই একবেলা করে খাচ্ছি দিনে! সারাদিন শেষে মধ্যবর্তী সময়ে একবার পেটভরে ভাত খাই। দিব্যি চলে যাচ্ছে। বলো দেখি ইন্দ্রিয়কে কেমন এক হাত দেখিয়ে দিলাম!"
নিজেকে তিরস্কার করলাম- "বাড়িতে যেতে বারণ করেছে বলে এমন চোখের পানি, নাকের পানি ফেলার কি আছে বাপু! সেই তুমি যে অবান্ছ্বিত, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘরে এ কি আজ নতুন! একটা রাস্তার কুকুরের যে তোমার থেকে মূল্যায়ন বেশী ও বাড়িতে সেতো আর নতুন জ্ঞান না।"
সত্যিইতো এতো নতুনতো নয়। তবে এও ঠিক সত্যটা বস্তুগত হয়ে কখনো সম্মুখে আসেনি। আজ যখন এলো তখন হয়তো প্রত্যাশিত হলেও ধাক্কাটা সমান ওজন নিয়েই বুকে লেগেছে।
ঃ "আমার কিছু কাগজপত্রের কাজ আছে। বাড়ি আসবো কাল।"
ঃ "কাল এসোনা। বাড়িতে মেহমান আসবে।"
ঃ "তো আসুক! বাড়িতেতো থাকার জায়গার অভাব নেই। আমি যে বাড়িতে আছি কি নেই, তাতো কেউ জানতেই পারেনা। আমি থাকবো আমার মতো!"
ঃ "সমস্যাতো সেখানেই। তোমার মত অপদার্থ, কুলাঙ্গারকে কেউ দেখুক তা আমি চাইনা। এলে পরের সপ্তাহে এসো।"
আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম তাৎক্ষণিক উপলব্ধিতে। আমার কোথাও যাবার জায়গা নেই বলেই কি এত অবজ্ঞা!
স্রষ্টা! তুমি আমায় জন্ম দিলে অথচ ঘর দিলেনা!
আমি তোমার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছিলাম যে আমায় হরদম কেবল যুদ্ধেই রত থাকতে হচ্ছে। এ যুদ্ধের শেষ কোথায়।
সরিষার তেল দিয়ে সেদ্ধ ডিম পেঁয়াজ, আর কাঁচা মরিচ চটকে ভর্তা করেছি। আর গরম ফুটানো ভাত। অমৃত একেবারে। প্রতিদিন খেলেও অরুচি আসেনা।
ভাবতে ভাবতেই খেয়াল করলাম গোটা কতক চোখের জল গাল গড়িয়ে টুপ টুপ করে ভাত পাতে পড়লো।
সাকিবের কিনে দেয়া এক প্যাকেট সিগারেট সপ্তাহ ধরে খাচ্ছি। আরো সপ্তাহ কতক যাবে। দুদিন ঘ্রাণ নিয়ে তৃতীয় দিনে একটা শলাকা ধরাই। বুকভরে দম নিয়ে ধোঁয়ায় উড়িয়ে দেই কাছিমের মত গুড়ি মেরে আসা কষ্টগুলো।
আমার দিন চলে যায় সঞ্জয় দা।
আমি এখন ইন্দ্রিয় উপেক্ষায় ওস্তাদ জানো! আর আগের মত ম্যাটেরিয়ালস্টিক নই।
কিন্তু এখনো আমি আঘাত পাই, কষ্ট পাই।
পরেরবার দেখা হলে আমায় এর প্রতিকার শিখিয়ে দিও।
পরেরবার দেখা হলে আমায় এর প্রতিকার শিখিয়ে দিও।
Comments
Post a Comment