আমি যদি শুভ'র প্রেমে পড়ি সেটা কেবলই সম্ভব হবে তার মা'র জন্য। রত্না মুখার্জি।
উপমহাদেশীয় কোনো মা যে আমাকে মুগ্ধ করতে পারবে, তা আমি এখনো স্বীকার করতে নারাজ।
কিন্তু আমার এই "অস্বীকৃতিকে" সদর্পে হটিয়ে দিয়ে রত্না মুখার্জি "স্যুপার মম" এর সিংহাসনে ঘাড় উঁচিয়ে বসে আছেন।
হ্যাঁ এমনিতে আমরা "মা দিবসে" সবার মা'কেই স্যুপার-মম বলি বটে, কিন্তু সে কেবলই ঠনঠনে আবেগ। অবশ্যই সব মাতাশ্রীই সুপার-মম যেমন সব বাবাই স্যুপার বাবা। তবুও আমরা দিনশেষে জমে থাকা আক্ষেপ আর অভিমান নিয়ে ঘুমাতে যাই রোজ।
আমাকে যেখানে আমার নিজের প্রজন্মের মিলেনিয়াল মায়েরা যারা অধিক শিক্ষিতা, আধুনিকা তারাই এতটুকু মুগ্ধ করতে পারেনা; সেখানে Gen-Z'র গোঁড়া, সমাজের আর ধর্মের শেকলে সত্ত্বা বেচে দেয়া জেন-জে বাবা-মার হর্ষবাদেরতো প্রশ্নই ওঠেনা।
কিন্তু আমি যতবার রত্না মুখার্জিকে দেখি ততবার তার প্রেমে পড়ি।
যদি সম্ভব হতো আমি শুভকে বিয়ে করবো রত্না মুখার্জির আঁচলের নীচে অধিকার সমেত ঢোকার জন্য।
শহরে এলে আজকাল উনাদের বাসাতেই থাকছি। এমনভাবে ঘাঁটি গেড়েছি মাঝেমধ্যে মনে হয় বাসা আমারই। সেদিন ইশা অফিস থেকে আসার পর দরজা খুলে বললাম-
ঃ আরে দিদি যে! আসুন ভেতরে, নিজের বাসা মনে করবেন একদম।
সে হেসে কুটিকুটি হয়!
আমি খুবই বন্ধুভাবাপন্ন একজন মানুষ। মানুষ খুব সহজেই আমার সাথে মিশতে পারে। কিন্তু আমি প্রায় একেবারেই পারিনা বলে চললে। লৌকিকতা বিবর্জিত, আটপৌরে হতে আমি এমনকি বাবা-মা'র সাথে পারিনা, বাইরের কারো সাথে প্রশ্নই আসেনা।
সেখানে ইশাদের বাড়িতে আমি আমার মত যাই, গ্যাঁট মেরে পড়ে থাকি, বেহায়ার মত চিনি ফুরিয়ে গ্যাছে বলে চা খেতে পারিনি বলে অনুযোগ শোনাই।
ইদানীংকাল লক্ষ্য করলাম দরজা খুলে যদি আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তা যেন খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।
ইদানীংতো আশা (ইশার বড় বোন) তুলেছ আরেক ঝুম। তাদের একমাত্র ভাইয়ের সাথে নাকি আমার বিয়ে দেবে। মাসি আমাকে বলছিল
ঃ "দেখেছো মৌ! ইশার বায়োডাটা বানিয়েছি! ওকে বিয়ে দিয়ে দিব
ঃ ভালো করেছেন। আমার জন্যও একটা বানান*!
মাঝে থেকে আশা হাঁহাঁ করে ওঠে!
ঃ *কেনো! কেনো বাপু! তোমাকে না বলেছি আমার ভাইয়ের সাথে তোমার বিয়ে দেবো!
ঃ আরে কি বলে না বলে!
ঃ কেনো ভাই! আমার ভাই কম কিসে!
ঃ আরে কম বেশির কথা কে বলছে কি মুশকিল! (আমার মোটামুটি কানটান গরম হয়ে যায় এমন কৌতুকে)
ঃ তো তাইলে রাজি হওনা কেনো ভাই! আমরা কত ভালবাসি তোমাকে!
যাক! বলছিলাম রত্না মাসির কথা। ভাত খেয়ে ঢেকুর তুলতে তুলতে জিজ্ঞেস করি চা খাবে কিনা। চা নিয়ে আমার আর মাসির কোনো সময়জ্ঞান। এই তীব্র গরমে, ভরদুপুরেও আমাদের চা খেতে এক রতি আপত্তি নেই!
সেদিনও মাসি ডাক দিয়ে চা হলো কিনা জানতে চাইলে আশা ছুটে আসে শুনে!
ঃ ছি মা! তুমি আপুকে বলছো চা বানাতে!
ঃ আরে তাতে হয়েছে কী! (আমি ওকে থামিয়ে দেই) আমিতো বানাচ্ছিলামই আমার জন্য। শুভ'র জন্য উনাকে পটানোর চেষ্টা করছি!
তা শুনে দু'জনেই হাহা করে হাসতে থাকে। অন্না খোঁচা দিয়ে বলে-
ঃতা মা ছেলের ঘরার করার জন্য মৌ আপুকে ঘরকন্না শেখাচ্ছো নাকি!
ঃ না! ওসব চলবেনা বাপু। চা খেতে চাইলে খালি বৌ'কে ঠেললে হবেনা। নিজে করেও খেতে জানতে হবে। সময়ে বৌ'কেও করে খাওয়াতে হবে!
আমাদের মধ্য দুপুরের চা পান |
বলুন!
এমন মা কোথায় পায় কেউ! এমন শাশুড়ি কে না চায়! সুতরাং আমি পুনশ্চঃ রত্না মুখার্জির প্রেমে পড়ি।
আমার সাথে মহাভারত, বলিউড, ভূগোল, অর্থনীতি, সমাজনীতি থেকে শুরু করে আদি অন্ত নিয়ে গল্প করার পর্যায়ে পড়ে এমন কাউকে কে না চায়!
মাসি একদিন চা খেতে খেতে বলছিলেন এদের সব কটাকে বিয়ে দিয়েই আমি ক্ষান্ত। তখন শুধু আমি দেশ বিদেশ ঘুরবো। আহা! কত কিছু দেখা বাকি!
উফফ...এ কথা, এ জীবনের প্রতি লালায়িত আকাঙ্খা, জীবনকে প্রাণভরে উপভোগ করবার এ আকুলতা আমি আজকালকার মিলেনিয়ালদের মাঝেই দেখিনা! আমি প্রেমে কীভাবে না পড়ি।
আমিতো ওদের দু'বোনকে বলি- শুনে রাখো। আমার যখন অনেক টাকা হবে বা বিদেশে পাড়ি জমানোর সুযোগ হবে তখন আমি তোমাদের মা'কে নিয়ে ভেগে যাব!
# আমি যদি শুভ'র প্রেমে পড়ি তা তার মায়ের জন্যই পড়বো!
Comments
Post a Comment